বিনা টিকিট ও ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কঠোর হবে রেলওয়ে , যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠক সোমবার। বৈঠকে কমলাপুর থেকে ঈদ স্পেশাল এবং নিয়মিত ট্রেন চলাচল ও স্টেশনে যাত্রী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনা হবে। এই প্রস্তুতিমূলক সভায় আরএনবি, জিআরপি, পুলিশ, র্যাবসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সব শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর।
রেল সচিব বলেন, পরিবারের সঙ্গে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে রাজধানী ছেড়ে নাড়ীর টানে বাড়ী যাবে লাখো মানুষ। এটা আমাদের সবার কাছে আবেগের বিষয়। যেহেতু একসঙ্গে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ী বা তার নিজ বাড়ীতে উৎনব পালন করতে যায়, তাই এ সময় সড়ক, রেল, নৌ পথসহ বিমান পথেও বাড়তি একটা চাপ সৃষ্টি হয়। এবারও তাই এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বিনা টিকিট ও ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কঠোর হবে রেলওয়ে , যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠক সোমবার
সচিব বলেন, যাত্রী ভোগান্তি লাঘবে এবারই প্রথম ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট শত ভাগ বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। এতে কাউন্টারে গিয়ে ঘ›ণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার ভোগান্তি পোহাতে হয়নি আগ্রহী যাত্রীদের। এবার ঈদ উপলক্ষে স্টেশনে তাৎক্ষণিক স্ট্যাণ্ডিং টিকিট বিক্রির সুবিধা থাকলেও টিকিট ছাড়া কোন যাত্রীকে রেলভ্রমণ করতে দেয়া হবে না। একই ভাবে ছাদেও যাতে কোন যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ট্রেনের সিডিউল যাতে কোনভাবেই বিপর্যয় না হয় সেজন্য রেলওয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিলের চিন্তভাবনাও করা হচ্ছে।

আগামী ১৭ এপ্রিল থেকে রেলের ১০ দিনের বিশেষ ঈদ যাত্রা শুরু হবে। ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আমি বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেল স্টেশন পরিদর্শন করেছি। সেখানে যেসব নির্দেশনা দিয়েছি একই আদলে কমলাপুরেও করা যায় কিনা সে বিষয়ে আসন্ন সভায় আলোচনা করা হবে। এখানে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।
রেল সচিব বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিবার বিমান বন্দরে যাত্রীদের একটা বড় চাপ থাকে। এসময় অনেকে টিকিট কাটে কমলাপুর থেকে কিন্তু ট্রেনে চড়ে এই স্টেশন থেকে। এরা প্রায় সবাই উত্তরা বা আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা। তারা কমলাপুর থেকে বেশি ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে। এতে এই স্টেশনে একটু বেশি চাপ পড়ে। সাধারণ সময়ে হয়তো বিমান বন্দর থেকে ২০০ যাত্রী ট্রেনে ওঠার কথা কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এখান থেকে ট্রেনে ওঠে গড়ে প্রায় ৭০০ যাত্রী। এখানে একটি ট্রেন ২ থেকে ৩ মিনিট থামে যাত্রী ওঠা-নামা করার জন্য। এসময় সব যাত্রী প্লাটফর্মে থাকায় সবাই একসঙ্গে ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়াহুড়ি করে। এতে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ কারণে এবার যাত্রীদের একটু বাড়তি সময় নিয়ে স্টেশনে আসার অনুরোধ জানিয়ে ড. হুমায়ুন বলেন, এই সমস্যা সমাধানে এবার বিমান বন্দর স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথের বাইরে কার পার্কিং এর স্থানে জিগজ্যাগ করিডোর স্থাপন করছি। এখানে পাঁচটি প্রবেশ পথ বা করিডোর থাকবে। যাত্রীদের এসব করিডোর দিয়েই স্টেশনে প্রবেশ করতে হবে। এতে একসঙ্গে যাত্রীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
সচিব বলেন, পরিদর্শনের সময় দেখেছি, জয়দেবপুর স্টেশনে দুই/তিনটা পয়েন্ট খোলা। তাড়াতাড়ি স্টেশনে প্রবেশ করতে যাত্রীরা এসব পয়েন্ট ব্যবহার করে। কারণ ঘুরে আসতে অনেক সময় ব্যয় হয় যাত্রীদের। এখানেও এন্ট্রি পয়েন্ট কম হওয়ায় সেখানেও বিমান বন্দর স্টেশনের মত জিগজ্যাগ করিডোর স্থানের ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি খোলা জায়গাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে যে কেউ টিকিট ছাড়া বা অবাঞ্ছিত লোকজন স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারে। তবে প্রবেশ পথ একটি হওয়ায় এখানে বেশ চাপ পড়বে মনে হচ্ছে। একারণে প্রথমে একদিন বা দু’দিন দেখে পর আবার নতুন সিদ্ধান্ত নেব। তবে নির্দেশনা একটাই টিকিট ছাড়া বা এন্ট্রি পয়েন্ট ছাড়া স্টেশনে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এই স্টেশনেও বের হওয়ার জন্য আলাদা গেট রাখা হবে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, সরকারের নেয়া এসব সিদ্ধান্ত যাত্রীদের জানানোর লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
