বিজয়ের মাসকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং সমকালীন সৃজনশীলতার সম্মিলিত উদ্যাপন হিসেবে ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চার দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন ‘প্রাণে আনো গান’। আগামীকাল থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব, যেখানে সংগীত, কবিতা, আবৃত্তি, লোকজ সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও কারুশিল্প একত্রে তুলে ধরবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের বহুস্তরীয় রূপ। ঢাকা ব্যাংকের সহযোগিতায় আয়োজিত এ উৎসব রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজকদের মতে, ‘প্রাণে আনো গান’ কেবল একটি বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়; বরং এটি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক সাধনারই একটি ধারাবাহিক অংশ। বিজয়ের মাসে এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো—নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর মূল্যবোধের সেতুবন্ধন তৈরি করা এবং সঙ্গীত ও শিল্পের মাধ্যমে সৃজনশীলতা, মানবিকতা ও সামষ্টিক স্মৃতিচেতনার চর্চা জোরদার করা।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে বেঙ্গল শিল্পালয়ের লেভেল-৪ এ মূল সংগীতানুষ্ঠান শুরু হবে। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার। চার দিনের কর্মসূচিতে থাকছে শাস্ত্রীয় সংগীত, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, লোকগান, দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক প্রতিবাদী গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাট্যপাঠ।
প্রথম দিনে দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করবেন মোস্তাফিজুর রহমান, মানসী সাধু, মাইনুর রহমান খান ও মহিউদ্দিন শামীম। নজরুলের ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করবেন বিতু কুমার শীল এবং লোকসংগীত পরিবেশন করবেন কিরণ চন্দ্র রায়। দ্বিতীয় দিনে থাকছে সুপ্রিয়া দাসের কণ্ঠে বাংলা ঠুমরি, ভাষ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠে জসীমউদ্দীনের ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ থেকে নির্বাচিত অংশ, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান নিয়ে চম্পা বণিক এবং লোকগানে লাবিক কামাল।
তৃতীয় দিনে আজিজুর রহমান তিন কবির গান পরিবেশন করবেন, নজরুলের আধুনিক গান গাইবেন সুস্মিতা দেবনাথ, আবৃত্তিতে থাকবেন রায়হানুল আমিন কল্লোল এবং রবীন্দ্রসংগীতে আদিতি মহসিন। শেষ দিনে রবীন্দ্রনাথের তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত ‘ভাঙা গান’ পরিবেশন করবেন মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা, জীবনঘনিষ্ঠ আধুনিক গান গাইবেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান এবং লোকসংগীতে থাকবেন টুনটুন বাউল।
সংগীতের পাশাপাশি উৎসবে রয়েছে ‘কারুকথা’—নির্বাচিত গ্রামীণ কারুশিল্প ও হস্তশিল্পের মেলা, যা প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বেঙ্গল শিল্পালয়ের সুবীর চৌধুরী প্রাঙ্গণে চলবে। এছাড়া ৩৫ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে দলীয় শিল্প প্রদর্শনী ‘অন্নস্বর’ অনুষ্ঠিত হবে কামরুল হাসান প্রদর্শনী গ্যালারিতে, যা নারীর জীবন-অভিজ্ঞতা, ইতিহাস ও শিল্পচর্চার বিবর্তনকে কেন্দ্র করে সাজানো। শিশু ও কিশোরদের জন্য থাকবে সৃজনশীল কর্মশালা ‘আকাশ-কুসুম’।
উৎসব এক নজরে
| দিন | প্রধান পরিবেশনা | উল্লেখযোগ্য শিল্পী |
|---|---|---|
| প্রথম দিন | দেশাত্মবোধক গান, নজরুলের ভক্তিগীতি, লোকসংগীত | বিতু কুমার শীল, কিরণ চন্দ্র রায় |
| দ্বিতীয় দিন | বাংলা ঠুমরি, কবিতাপাঠ, চলচ্চিত্রের গান | সুপ্রিয়া দাস, চম্পা বণিক |
| তৃতীয় দিন | তিন কবির গান, রবীন্দ্রসংগীত | আজিজুর রহমান, আদিতি মহসিন |
| চতুর্থ দিন | রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান, আধুনিক ও লোকগান | ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, টুনটুন বাউল |
সব আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। সব মিলিয়ে ‘প্রাণে আনো গান’ বিজয়ের মাসে এক অনন্য সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি—যা সংগীত ও শিল্পের মাধ্যমে বাঙালির চেতনাকে নতুন করে জাগ্রত করে।
