৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক মিশন এখন নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার চট্টগ্রামে ভারতের ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর ভিসা কেন্দ্রগুলোও একদিন করে আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে।
নয়াদিল্লিতে গতকাল বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভ সংক্রান্ত ঘটনার বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল জানিয়েছেন, ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার প্রতিবাদে ২০–২৫ জন যুবক শনিবার বিক্ষোভ করেছিলেন। তিনি বলেন, তারা নিরাপত্তা বাধা ভেঙে প্রবেশ করেননি এবং নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেননি। জয়সোয়াল কিছু বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ চালানোর অভিযোগও করেন।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভারতের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার মধ্যে থাকা বাংলাদেশ মিশন অত্যন্ত নিরাপদ। সেখানে চরমপন্থীরা প্রবেশ করতে পারবে না। যদি প্রবেশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা হতেই পারে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভকারীরা শুধু স্লোগান দেননি, বরং হুমকিস্বরূপ কথাবার্তা ও নানা আচরণও করেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরিবারসহ সেখানকার প্রহরীরা নিরাপত্তার জন্য আতঙ্কিত বোধ করেছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। সংরক্ষিত এলাকায় বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ আটকানো সব দেশের স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।”
ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস হত্যার প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, “একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, এই অঞ্চলের সব দেশেই ঘটে।”
২০১৫ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত ভিসা এবং বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পাল্টা ঢাকার পক্ষ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও তার বক্তব্যকে ঢাকা বারবার আপত্তি জানিয়েছে।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদি হত্যার সন্দেহভাজন খুনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়েছে। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আহ্বান জানায়, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহায়তা না করা হয়। এরপর ১৭ ডিসেম্বর ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে নিরাপত্তার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
নিরাপত্তার কারণে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের ভিসা আবেদন কেন্দ্র দুপুর ২টায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ‘জুলাই ঐক্য’ ব্যানারে ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে পুলিশ রামপুরায় মিছিল আটকে দেয়।
