বন্ধু রাষ্ট্রদের আহ্বান: ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা এখন বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ধীরগতিতে খারাপের দিকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে সংকটজনক পর্যায়। বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রতি জোর দিচ্ছে।

জাপান ও রাশিয়া ইতোমধ্যেই প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় জাপানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি জানিয়েছিলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আস্থা ও বোঝাপড়া ছাড়া আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ হচ্ছে।”

সম্প্রতি ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন বলেন, “ঢাকা-দিল্লির যেকোনো উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত করতে হবে। এটি শুধু দুই দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এবং তারা দুই দেশের উত্তেজনা কমানোর পক্ষে।

বাণিজ্য ও সীমান্তে সংঘাত, ভারতীয় গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ এবং আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর ও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা সূচিত করেছে, তবে ড. ইউনূসের চীনে সফর এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় দূরত্ব এখনও برقرار।

সাবেক রাষ্ট্রদূতরা মনে করান, বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্ক চায়। কারণ অস্থিতিশীলতা শুধুমাত্র দু’দেশকেই নয়, সমগ্র ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বর্তমান দ্বন্দ্বের একাংশ ড. ইউনূসের পশ্চিমা সম্পর্ক ও ভারত বিরোধী অবস্থানের কারণে।

ঢাকায় একজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, “দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক শুধু আঞ্চলিক নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও ইউরোপেও প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি বিপর্যস্ত হচ্ছে।”

সরকারি স্তরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক চাইছে না। অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আলাদা দেখার চেষ্টা করছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তারা সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে।”

প্রধান বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ ও পরামর্শ

দেশমন্তব্য/প্রস্তাবনাতারিখপ্রেক্ষাপট
জাপানআঞ্চলিক কানেক্টিভিটি ও আস্থা বাড়াতে সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি২২ ডিসেম্বর ২০২৪মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প
রাশিয়াউত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত করতে হবে২০২৫দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য
যুক্তরাষ্ট্রআঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রয়োজন২০২৫ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তন
বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশশান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক চাই২০২৫নির্বাচনী প্রভাব ও বিনিয়োগ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা, সচেতন কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও উস্কানিমূলক পরিস্থিতি এড়ানো ছাড়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে দুই দেশের পক্ষকে খোলাখুলি সংলাপে উৎসাহিত করছে, যাতে ভবিষ্যতে চরমপন্থি দল ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতার প্রভাব কমানো যায়।