দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি কৃত্রিমভাবে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খনির শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না এবং বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে কয়লা কিনতে বাধ্য করার মাধ্যমে খনিটিকে লোকসানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। খনি বন্ধ হলে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার সরাসরি জীবিকার সংকটে পড়বে।
গত সোমবার দুপুরে বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানি লিমিটেড শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে খনির ভেতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও অন্যান্য নেতারা। তারা জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কয়েকজন কর্মকর্তা খনির পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব বিস্তার করে খনিটিকে ধ্বংসের চেষ্টা করছেন। শ্রমিকরা অবিলম্বে বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ দুই বিতর্কিত কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছেন এবং দাবি পূরণ না হলে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খনিটি ২০০৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে চালুর পর থেকে অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানকর হলেও বড়পুকুরিয়া খনি লাভজনক। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট, ট্যাক্স ও রয়্যালটির মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে প্রায় ৫,৫০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ করদাতার স্বীকৃতি পেয়েছে।
বর্তমানে খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার জমাট বাধা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ২ লাখ ২০ হাজার টন হলেও বর্তমানে সেখানে পাঁচ লাখ টনের বেশি কয়লা জমা রয়েছে। কয়লার স্তূপ ১৫ ফুটের পরিবর্তে ৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার ফলে সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়া এবং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এই কয়লা ব্যবহার হচ্ছে না, এবং অন্য কোথাও বিক্রির অনুমতিও নেই।
| তথ্য | পরিমাণ / খরচ |
|---|---|
| ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা | ২,২০,০০০ টন |
| বর্তমানে জমা কয়লা | ৫,০০,০০০ টন |
| কয়লার স্তূপ উচ্চতা | ৫০ ফুট (প্রকৃত সক্ষমতা ১৫ ফুট) |
| প্রতি টন উৎপাদন খরচ | ১৫০–১৭৬ ডলার |
| পিডিবি ক্রয় মূল্য | ৯১–১১০ ডলার |
| সরকারি আয় (ভ্যাট, ট্যাক্স, রয়্যালটি) | ৫,৫০০ কোটি টাকা |
খনির মহাব্যবস্থাপক কে এম রাজিবুল আলম জানিয়েছেন, ইয়ার্ডে অতিরিক্ত কয়লা জমা থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তবে কয়লা বিক্রির সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, আগামী মার্চে কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু হলে মজুত কয়লার ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
শ্রমিকরা আশঙ্কা করছেন, কৃত্রিম লোকসান দেখিয়ে খনিটিকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে, যা দেশের কয়লাভিত্তিক শক্তি নিরাপত্তা এবং প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের জীবিকাকে হুমকিতে ফেলবে।
