বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে উপজেলার গাড়িদহ এলাকায় অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখায় পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করেছে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় জানমালের বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও স্থানীয় জনমনে এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে নিয়োজিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন হামলাকে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্টের অপপ্রয়াস হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘটনার বিবরণ ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ নভেম্বর (শনিবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে যখন পুরো এলাকা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক তখনই এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। একদল দুর্বৃত্ত অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের মূল ফটকে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হলে কর্তব্যরত নৈশপ্রহরীর নজরে আসে বিষয়টি। তাঁর তাৎক্ষণিক তৎপরতা ও সাহসিকতায় এক বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম জানান, দুর্বৃত্তরা মূলত ব্যাংকের অবকাঠামো ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই আগুন লাগিয়েছিল। তবে নৈশপ্রহরীর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কোনো নথিপত্র বা আসবাবপত্রের ক্ষতি না হলেও প্রবেশপথের ওপর থাকা ব্যাংকের নামফলকটি আংশিকভাবে পুড়ে গেছে এবং মূল ফটকের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও আইনি পদক্ষেপ
ঘটনার পর পর শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বখতিয়ার উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর অবশিষ্টাংশ পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রাথমিক আলামত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাইরে থেকে পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে এই আগুন লাগানো হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে, শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “খবর পাওয়ামাত্রই পুলিশের একটি দল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যদিও রাতের অন্ধকার এবং জনশূন্যতার সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে, ফলে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপর রয়েছে।” তিনি আরও জানান যে, এই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন এবং পুলিশ জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সারসংক্ষেপ
নিচে উক্ত অগ্নিকাণ্ড ও তার পরবর্তী পরিস্থিতির একটি সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হলো:
| বিষয় | বিস্তারিত তথ্য |
| প্রতিষ্ঠানের নাম | গ্রামীণ ব্যাংক, গাড়িদহ শাখা, শেরপুর। |
| ঘটনার তারিখ ও সময় | ১৫ নভেম্বর, শনিবার (রাত ২:০০ ঘটিকা)। |
| আক্রমণের পদ্ধতি | বাইরে থেকে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ। |
| ক্ষয়ক্ষতির ধরন | প্রধান ফটকের নামফলক ও অবকাঠামোর আংশিক ক্ষতি। |
| প্রতিরোধ ব্যবস্থা | নৈশপ্রহরী ও স্থানীয়দের দ্রুত পদক্ষেপ। |
| তদন্তকারী সংস্থা | শেরপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। |
| বর্তমান অবস্থা | তদন্তাধীন এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। |
