ঢাকায় সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সম্প্রতি সংঘটিত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট-এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি। এই উদ্যোগটি নিয়েছে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ’, যার আওতায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ—including শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং সংস্কৃতিকর্মী—অংশগ্রহণ করেন।
বিকেল ৪টায় আবাহনী মাঠ সংলগ্ন ফুটপাথে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিমঞ্চ ও রূপালি পর্দার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা, যেমন লুভা নাহিদ চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী আজাদ আবুল কালাম, আজমেরী হক বাঁধন, বাকার বকুল, অরুপ রাহী। বক্তারা নিন্দা জানান শুধু হামলার জন্যই নয়, বরং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। এছাড়া তারা ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে সংঘটিত হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং মিউজিক সামগ্রী পুড়িয়ে ফেলার ঘটনারও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিতরা প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন, যাতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় যে দেশের সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সহিংস আঘাত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বরদাস্ত করবে না। বক্তারা মনে করান যে, সংস্কৃতি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা সমাজের মেরুদণ্ড, যা সুরক্ষা ও সম্মান পেতে হবে।
একই সময়ে ছায়ানট ভবনের সামনের রাস্তায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট আয়োজিত সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন কণ্ঠশিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিসেবীরা। সমাবেশটি সংগীত, গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। গাওয়া হয় বহু জনপ্রিয় গণসংগীত, যেমন:
- ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’
- ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’
- ‘আমার দেশের মাটি’
- ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’
- ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’
- ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’
- ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’
সমাবেশের শেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। অংশগ্রহণকারীরা জানান যে এই আয়োজন শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং সাংস্কৃতিক সংহতি, সামাজিক সচেতনতা এবং শিল্পীদের একতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
প্রতিবাদ কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত তথ্য :
| বিষয় | বিবরণ |
| আয়োজনকারী | দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ |
| তারিখ ও সময় | মঙ্গলবার, বিকেল ৪টা |
| স্থান | ধানমণ্ডি, সাতমসজিদ রোড, আবাহনী মাঠ সংলগ্ন ফুটপাথ |
| অংশগ্রহণকারীরা | শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী |
| প্রধান বক্তৃতা | লুভা নাহিদ চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, আজমেরী হক বাঁধন, বাকার বকুল, অরুপ রাহী |
| দাবিসমূহ | শরিফ ওসমান হাদীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার, হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিচার |
| সাংস্কৃতিক আয়োজন | গান, কবিতা আবৃত্তি ও জাতীয় সংগীত অন্তর্ভুক্ত |
এই কর্মসূচি প্রমাণ করে যে শিল্পী, সাংবাদিক এবং সংস্কৃতিসেবীরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ববোধে সচেতন। তারা স্পষ্টভাবে বলছেন যে সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের প্রতিবাদ ও সমাবেশ শুধু নিন্দা জানানো নয়, বরং সমাজকে একত্রিত করার, সচেতনতা বৃদ্ধির এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রদর্শনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
এছাড়া উপস্থিতরা জানান, এমন প্রতিবাদ কর্মসূচি দেশের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় নতুন উদ্দীপনা যোগ করবে, এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সমাজের শক্তি বাড়াবে।
