পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এএসআইসহ তিন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সংঘটিত এই হামলাটি গত কয়েক দিনের মধ্যে তৃতীয়, যা প্রদেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে।
Table of Contents
পরিকল্পিত হামলা: বিস্ফোরণের পর গুলিবর্ষণ
পুলিশ জানায়—হামলাটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। আইইডি বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই হামলাকারীরা গুলি চালায়, যা হামলাকে আরও প্রাণঘাতী করে তোলে। এ ধরনের কৌশল সাধারণত সুসংগঠিত মিলিট্যান্ট গোষ্ঠীগুলোরই হয়ে থাকে। সড়কের পাশের ঝোপঝাড় বা পাথরের আড়ালে বিস্ফোরক পুঁতে অপেক্ষা করা হয় টার্গেট আসার।
টানা সহিংসতার শৃঙ্খল
এই হামলার আগে গত দুই দিনে বান্নু ও উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তিনটি আলাদা সহিংস ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। এর মধ্যে একজন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার, বাকিরা পুলিশ সদস্য। এই ধারাবাহিকতা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ধারণা করছে—একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং শীঘ্রই বড় ধরনের আক্রমণের চেষ্টা করতে পারে।
উচ্চপর্যায়ের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন—“রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জানিয়েছেন—সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় অভিযান শুরু হবে। তবে অতীতে এ ধরনের অনেক ঘোষণাই বাস্তবে কার্যকর হয়নি বলে সাধারণ জনমনে সন্দেহ বাড়ছে।
আফগানিস্তান–ফ্যাক্টর: সীমান্তের অস্থিতিশীলতা
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। খাইবার পাখতুনখোয়ার বিস্তৃত সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয় সৃষ্টি হয়েছে। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর পাকিস্তান ভিত্তিক টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি।
পরিসংখ্যান যা প্রমাণ করে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ
পুলিশের প্রতিবেদনে প্রকাশ—২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী ঘটনার সংখ্যা পৌঁছায় ৬০০–র ওপর। এই হামলাগুলোতে হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক—৭৯ পুলিশ এবং ১৩৮ সাধারণ নাগরিক নিহত। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—পুলিশকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলার অর্থ হচ্ছে, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তা বাহিনীকে দুর্বল করতে চায়। পুলিশ দুর্বল হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরও হুমকিতে পড়বে। পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন হামলা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও বাড়াচ্ছে।
সমাধানের পথ কোনদিকে?
বিশ্লেষকদের মতে—শুধু সামরিক অভিযান নয়, রাজনৈতিক সংলাপ, সীমান্ত কূটনীতি, গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয়—সবই একসঙ্গে প্রয়োজন। অন্যদিকে স্থানীয় জনগণকে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত করা জরুরি, যাতে মিলিট্যান্টদের আশ্রয়প্রদান বা সমর্থন কমে আসে।
