পদত্যাগ করে ঢাকা থেকেই নির্বাচন করবেন উপদেষ্টা আসিফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা স্পষ্ট করেছেন। গত রবিবার (৯ নভেম্বর) ধানমন্ডি থানা নির্বাচন অফিসে ভোটার এলাকা পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদনের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান যে, তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এই ছাত্রনেতার নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণের এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ও ভোটাধিকার নিয়ে বক্তব্য

আসিফ মাহমুদ তাঁর বর্তমান নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা-৩ থেকে ভোটার পরিবর্তন করে ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-কলাবাগান এলাকা) আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন। ভোটার পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

“যেহেতু ঢাকা থেকেই নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে, তাই নিজের ভোটটি সেখানেই দেব যাতে তা অপচয় না হয়। আমি আগে ভোটার হলেও ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত পরিস্থিতির কারণে কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে পারিনি। এবার আমি নিশ্চিতভাবে নিজের ভোটটি দিতে চাই।” — আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ইচ্ছা

নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আসিফ মাহমুদ জানান যে, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করেননি। তাঁর পরিকল্পনার প্রধান দিকগুলো হলো:

  • নির্বাচনী এলাকা: ঢাকা থেকেই নির্বাচন করবেন, তবে ঢাকা-১০ বা অন্য কোনো আসন কি না তা এখনো চূড়ান্ত নয়।

  • প্রার্থিতার ধরন: বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার পরিকল্পনা করছেন।

  • রাজনৈতিক অবস্থান: কোনো রাজনৈতিক দল তাঁর জন্য আসন ফাঁকা রাখছে কি না, সেটি তাঁর বিবেচ্য নয়; তিনি নিজের একক সিদ্ধান্তে এগিয়ে যেতে চান।


আসিফ মাহমুদের নির্বাচনী পরিকল্পনার মূল পয়েন্ট

এক নজরে আসিফ মাহমুদের ঘোষণা ও পরিকল্পনা নিচের টেবিলে দেওয়া হলো:

বিষয়বিস্তারিত তথ্য
বর্তমান পদস্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসরকার থেকে পদত্যাগ ও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
বর্তমান ভোটার এলাকাকুমিল্লা-৩।
আকাঙ্ক্ষিত ভোটার এলাকাঢাকা-১০ (ধানমন্ডি)।
রাজনৈতিক পরিচয় (সম্ভাব্য)স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচনের লক্ষ্যগণতান্ত্রিক রূপান্তর ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

পদত্যাগের সময়কাল ও সরকারের সংস্কার কাজ

পদত্যাগ সম্পর্কে উপদেষ্টা জানান, তিনি হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এবং বর্তমান দায়িত্বগুলো গুছিয়ে নিয়ে পদত্যাগের সময় নির্ধারণ করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দ্রুতই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

এছাড়াও তিনি জুলাই বিপ্লবের বিচার ও সংস্কার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন:

  • বিচারের অগ্রগতি: তিনি জানান, এই মাসের মধ্যেই জুলাই গণহত্যার বিচারের বিষয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখা যাবে।

  • গণতান্ত্রিক রূপান্তর: সরকার বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কাজে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট।

প্রেক্ষাপট ও জনমত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ মাহমুদের সরাসরি নির্বাচনে আসার ঘোষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি নির্বাচনী রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন, তা নিয়ে এখন থেকেই বিশ্লেষকদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ তিনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।