নোয়াখালীতে চর দখল সংঘর্ষে পাঁচ জন গুলিবিদ্ধসহ নিহত

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দুর্গম জাগলার চরে দীর্ঘদিনের জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সশস্ত্র সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে সংঘটিত এই গোলাগুলি পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে চরটি কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সামছুদ্দিন ওরফে কোপা সামছু গ্রুপের প্রধান সামছুদ্দিন, তার ছেলে মোবারক হোসেন, তার সহযোগী জুম্মা (যিনি এলাকায় ‘জুম্মা ডাকাত’ নামে পরিচিত), এবং প্রতিপক্ষ আলা উদ্দিন গ্রুপের নেতা আলাউদ্দিন। নিহত আলাউদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি মরদেহগুলো ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জাগলার চরে বর্তমানে কয়েক শত ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছে। এই চরের মোট জমির প্রায় অর্ধেক খাস জমি এবং বাকি অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন বা বয়ার সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ার হরণি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিক ও ফরিদ কমান্ডারের নেতৃত্বে সামছুদ্দিন গ্রুপ চরের জমি দখল করে প্রতি একর ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি করে আসছিল। সম্প্রতি ওই বিক্রির অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়; অভিযোগ রয়েছে, সামছুদ্দিন গ্রুপ আর মুশফিক ও ফরিদ কমান্ডারকে নির্ধারিত অর্থ দিচ্ছিল না।

এই বিরোধের জের ধরেই মঙ্গলবার ভোরে মুশফিক ও ফরিদের পক্ষ নিয়ে আলাউদ্দিন, শীর্ষ সন্ত্রাসী কাউয়া কামাল ও নিজাম মেম্বারের নেতৃত্বে প্রায় ২০–২৫ জন অস্ত্রধারী জাগলার চরে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে চরে অবস্থানরত সামছুদ্দিনের লোকজনের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি গোলাগুলি শুরু হয়। তীব্র সংঘর্ষে আলাউদ্দিনসহ উভয় পক্ষের কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সামছুদ্দিনের বেশিরভাগ অনুসারী পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সামছুদ্দিন নিজেই আলাউদ্দিনকে গুলি করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এর প্রতিশোধ হিসেবে আলাউদ্দিনের অনুসারীরা সামছুদ্দিন, তার ছেলে মোবারক ও কর্মী জুম্মাসহ কয়েকজনকে গুলি, কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে, যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী হয়।

ঘটনা ভোরে ঘটলেও দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় পুলিশ ও কোস্টগার্ড বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি দাবি করেন, নিহতের সংখ্যা পাঁচের বেশি হতে পারে এবং আহতের সংখ্যা অন্তত ১০ জন। তবে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল আলম সন্ধ্যায় জানান, দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বিলম্ব হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে এলাকায় অবস্থান করছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে নদীপথে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত তথ্য (সারণি):

বিষয়বিবরণ
স্থানজাগলার চর, হাতিয়া উপজেলা, নোয়াখালী
সংঘর্ষের সময়মঙ্গলবার ভোর
নিহতঅন্তত ৫ জন
আহতকমপক্ষে ১০ জন
জড়িত গ্রুপসামছুদ্দিন গ্রুপ ও আলা উদ্দিন গ্রুপ
সংঘর্ষের কারণচর দখল ও জমি বিক্রির অর্থ নিয়ে বিরোধ
আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযান

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং চরের ভূমিহীন পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।