ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের পোস্টারবয় নেইমার জুনিয়রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান জল্পনার অবসান হতে যাচ্ছে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া গণমাধ্যম। শৈশবের ক্লাব সান্তোসের সঙ্গে নতুন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছেছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড—এমনটাই দাবি একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ পর্যন্ত সান্তোসের জার্সিতেই দেখা যেতে পারে নেইমারকে।
৩৩ বছর বয়সী নেইমার চলতি বছরের জানুয়ারিতে সৌদি আরবের আল হিলাল ছেড়ে আবেগঘন প্রত্যাবর্তন করেন সান্তোসে। দীর্ঘদিন ইনজুরিতে ভুগে মাঠের বাইরে থাকার পর ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগে ফিরে আসা ছিল তার ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। যদিও মাঠে নিয়মিত খেলায় ফিরতে সক্ষম হন তিনি, তবে চলতি মাসের শেষেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
তবে মার্কিন ক্রীড়া মাধ্যম ইএসপিএন জানায়, নেইমার ও সান্তোস কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা এখন ‘অগ্রসর পর্যায়ে’ রয়েছে। খুব শিগগিরই ছয় মাসের একটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে সই হতে পারে, যা মূলত বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নেইমারের প্রস্তুতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে নেইমারের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল একাধিক ক্লাব। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল লিওনেল মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামির নাম। তবে সব প্রস্তাব উপেক্ষা করে সান্তোসেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেইমার। কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে—পরিচিত পরিবেশ, চাপমুক্ত ফুটবল এবং ধীরে ধীরে ফিটনেস ফিরে পাওয়ার সুযোগ। গত মৌসুমে তার পারফরম্যান্স সান্তোসকে শীর্ষ লিগে টিকে থাকতে বড় ভূমিকা রাখে।
চলতি মৌসুমে সান্তোসের হয়ে নেইমারের পারফরম্যান্স পরিসংখ্যানেও নজরকাড়া :
| বিষয় | পরিসংখ্যান |
| ম্যাচ সংখ্যা | ৩০ |
| গোল | ১২ |
| অ্যাসিস্ট | ৬ |
| বয়স | ৩৩ বছর |
| প্রস্তাবিত চুক্তি | ৬ মাস |
তবে উদ্বেগের জায়গা তার হাঁটুর চোট। মৌসুমের শেষ দিকে ব্যথা নিয়েই মাঠে নামতে হয়েছে তাকে। ক্লাবের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, খুব শিগগিরই হাঁটুর অস্ত্রোপচার করাতে হতে পারে, যার ফলে প্রায় এক মাস মাঠের বাইরে থাকতে পারেন এই তারকা। বর্তমানে মৌসুম শেষ হওয়ায় তিনি ছুটিতে রয়েছেন। নতুন মৌসুম শুরু হবে জানুয়ারির শেষ দিকে।
সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অবশ্য জাতীয় দলে ফেরা। প্রায় দুই বছর ধরে ব্রাজিল দলে নেই নেইমার, তবে ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তার স্বপ্ন এখনো অটুট। সান্তোসে ফেরার পর তিনি বলেছিলেন, “জাতীয় দলে ফেরা আমার বড় লক্ষ্য। বিশ্বকাপ জেতার একটি মিশন এখনো অসম্পূর্ণ আছে—সম্ভবত এটিই আমার শেষ সুযোগ।”
ব্রাজিলের কোচ কার্লো আনচেলত্তিও নেইমারকে পুরোপুরি বাতিল করে দিচ্ছেন না। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নাম নয়—ফর্ম ও ফিটনেসই হবে চূড়ান্ত মানদণ্ড। আনচেলত্তির ভাষায়, “নেইমার যদি যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, ভালো খেলতে পারে এবং অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে, তবেই সে বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে। এখানে কাউকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে না।”
২০২৬ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে হাইতি, মরক্কো ও স্কটল্যান্ড। কঠিন এই গ্রুপ অতিক্রম করে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে সেলেসাও। সেই স্বপ্নের অভিযানে নেইমার থাকবেন কি না—তার উত্তর লুকিয়ে আছে আগামী কয়েক মাসের পারফরম্যান্স, ফিটনেস ও মানসিক দৃঢ়তার ওপরই।
