ধনীদের ফল পার্সিমন সাধারণ মানুষের বাজারে এসেছে

দেখতে অনেকটা পাকা গাবের মতো, সুমিষ্ট ও রসালো—মুখে নিলে স্বাদে মন ভরে যায়। এই ফলের নাম পার্সিমন, যা একসময় শুধুমাত্র ধনী ও সুপারশপের দোকানে পাওয়া যেত। তাই ব্যবসায়ীদের ভাষায় এটি ‘ধনীদের ফল’ হিসেবে পরিচিত। তবে এবার চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সহজলভ্য হয়ে এসেছে।

চট্টগ্রামের স্টেশন রোডে ফলমন্ডি ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক আড়তে পার্সিমন বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের পাইকারি দাম ছিল প্রতি কেজি ১,০০০–১,২০০ টাকা, যা এ বছর নেমে এসেছে ৭২০–৭৮০ টাকায়। ফলে বিক্রি বেড়েছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে দাম ৮৫০–৯০০ টাকা প্রতি কেজি, যা আগে ছিল প্রায় ১,৪০০ টাকা।

ধাপদাম (পাইকারি)দাম (খুচরা)পরিবর্তন
২০২৪১,০০০–১,২০০ টাকা১,৪০০ টাকা
২০২৫৭২০–৭৮০ টাকা৮৫০–৯০০ টাকাপ্রতি কেজি কমেছে ৩০০–৫০০ টাকা

পার্সিমনের ইতিহাস ও উৎস
পার্সিমন মূলত জাপানের জাতীয় ফল। জাপানে এটি ‘কাকি’ নামে পরিচিত। শরৎ ঋতু মানেই গাছভর্তি কমলা রঙের পার্সিমন। প্রাচীনকাল থেকে পার্সিমন কবিতা, চিত্রকলা ও গ্রামীণ উৎসবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী, খাদ্যসংকটের সময় শুকনা পার্সিমন (হোশিগাকি) বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

পুষ্টিগুণের দিক থেকেও পার্সিমন গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এ ও সি, ক্যারোটিনয়েড, পলিফেনলস ও ট্যানিন থাকে। এই উপাদানগুলো হৃদ্‌স্বাস্থ্য রক্ষা, প্রদাহ কমানো এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

বাজারে দাম কমার প্রধান কারণ
চট্টগ্রামের আড়তদাররা জানাচ্ছেন, ভারতীয় পার্সিমনের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। গত বছর প্রধানত জাপান ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হতো। তবে ভারত থেকে সরবরাহ দ্রুত ও সুলভ হওয়ায় বর্তমানে দাম কমে গেছে।

উৎস দেশআমদানি পরিমাণ (কেজি)দাম প্রতি কেজি
ভারত১,৭৫,০০০+৬৮০–৭৮০ টাকা
থাইল্যান্ডসীমিতউচ্চমূল্য

চট্টগ্রামে দৈনিক প্রায় ৩,০০০ কেজি পার্সিমন বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি আড়তে ১০–১২ জন এবং খুচরা বিক্রেতা ৫০ জনের কম এই ফল বিক্রি করছেন। মূলত বনেদি এলাকায় চাহিদা বেশি, তবে দাম কমার কারণে হাটহাজারী, পটিয়া ও বোয়ালখালীর বাজারেও পৌঁছাচ্ছে।

উৎপাদন ও চাষের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে পার্সিমন চাষ পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। যশোর ও বান্দরবানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। চারা পাওয়া যায়, তবে মানসম্মত নয়। পার্সিমনগাছ সাধারণত ১৫–৬০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং রোপণের সাত বছরের মাথায় ফল দিতে শুরু করে। দেশের আবহাওয়া কিছু প্রজাতির চাষের জন্য উপযোগী হলেও প্রধান সমস্যা মানসম্মত চারা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মসিউর রহমান জানিয়েছেন, “ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে উন্নত চারা আনা গেলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পার্সিমনের চাষ সম্ভব এবং স্থানীয় উৎপাদন বেড়ে গেলে দাম আরও কমানো সম্ভব।”