পূণ্যময় জিলহজের প্রথম দশক: করণীয় ও বর্জনীয়

পূণ্যময় জিলহজের প্রথম দশক: করণীয় ও বর্জনীয়। আশারায়ে জিলহজ, ইয়াওমে আরাফা, হজ, কুরবানি, ও আইয়ামে তাশরিক প্রভৃতি সমূহ কল্যাণে বেষ্টিত একটি মাস আরবি ১২ মাসের শেষ মাস ‘জিলহজ মাস’। কুরআনে বর্ণিত চারটি সম্মানিত মাসেরও একটি হলো এই ‘জিলহজ মাস’। যে মাসে সমাবেশ ঘটেছে গুরুত্বপূর্ন বহু আমলের। যে আমলগুলোর ফজিলতও অত্যন্ত অধিক।

যেমন : ১। কুরবানি দাতার জন্য মুস্তাহাব হলো, জিলহজের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানির কাজ সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত চুল, নখ, গোঁফ ও অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদিতে হাত না লাগানো। প্রয়োজনে এর আগেই এগুলো পয়-পরিস্কারের কাজ সেরে নেবে। রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যখন জিলহজের চাঁদ দেখবে তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানি করবে সে যেন চুল ও নখ না কাটে।’ (সহিহুল মুসলিম : হা. ১৯৭৭) আর যে ব্যক্তি কুরবানি করার সামর্থ  রাখে না সেও এই আমল করতে পারবে এবং এতে সওয়াবেরও অধিকারী হবে। বাচ্চাদেরকেও এ আমলে অভ্যস্ত করা যেতে পারে। (সুনানে আবু দাঊদ : ২৭৮৯)

পূণ্যময় জিলহজের প্রথম দশক: করণীয় ও বর্জনীয়

২। ১লা জিলহজ থেকে ঈদের দিনের আগ পর্যন্ত প্রতিটি দিন রোযা পালন করা এবং প্রতিটি রাত ইবাদত করে কাটানো। অর্থাৎ কিয়ামসহ কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল করে ইবাদতময় রাত্রি উদযাপন করা। নবিজি সা. নিজেও এভাবে কাটাতেন জিলহজের প্রথম দশক। (সুনানে আবু দাঊদ : ২৪৩৭) রাসুল সা.-এর ইরশাদ লক্ষ করুন, ‘যে সকল দিবা-রাত্রি ইবাদত করে কাটানো আল্লাহর কাছে প্রিয় এর মধ্যে সবচে প্রিয় হলো জিলহজের প্রথম দশকের ইবাদত।

 

২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা

 

কেননা এ মাসের একেক রোযার সওয়াব এক বছর রোযা রাখার সমতুল্য এবং এ মাসের একেকটি রাত্রের ইবাদতের সওয়াব কদরের রাত্রে ইবাদত করার সমতুল্য।’ (ফাজাইলুল আওকাত লিল বাইহাকি : ৩৪৬) বিশেষত আরাফার (৯জিলহজের) দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে রাসুল বলেছেন, ‘আমার আশা আরাফার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ রোজাদারের আগে ও পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহিহুল মুসলিম : হা. ১১৬২)

৩। সামর্থবানদের জন্য বাইতুল্লাহয় হজ পালন করতে যাওয়া। স্বাধীন, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মষ্তিষ্ক সম্পন্ন নারী-পুরুষ, ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের যাবতীয় খরচ ও নিজের যাতায়াতসহ সার্বিক খরচ বহনে সক্ষম পুরুষ, এবং মাহরামের যাতায়াত ব্যয় নির্বাহেও সক্ষম নারীর উপর হজ করা ফরয। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭) এটা জিলহজ মাসেরই অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনোরূপ গুনাহে না জড়িয়ে সঠিকভাবে হজ পালন করবে সে সদ্য ভুমিষ্ঠ নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে বাড়িতে ফিরবে।’ (সহিহুল বুখারি : হা. ১৫২১) অপর হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির উপর হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও হজ পালন করে না সে ইহুদি হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক।(তার ব্যাপারে আমার কোনো দায়িত্ব নেই)’। (সুনানে দারেমি : ১৮২৬)

৪। তাকবিরে তাশরিক বলা। ৯ই জিলহজ তথা আরাফার দিন ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সকল মুসলমান নর-নারীর উপর একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আইয়ামে তাশরিক হলো, পানাহার ও আল্লাহর জিকিরের জন্য।’ (মুসনাদে আহমদ : হা. ২০৭২২) তাকবিরটি হলো, الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر و لله الحمد অতএব আমরা এদিনগুলোতে জিকির ও তাকবির পাঠের খুব ইহতিমাম করব এবং  ১০তারিখ তথা ঈদের দিন থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা হারাম জেনে সে মোতাবেক আমল করব।

৫। ঈদের রাতে ইবাদত করা। রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত্রিতে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে অতিবাহিত করবে যেদিন (কিয়ামতের দিন) সকলের অন্তর সমূহ মরা থাকবে তার অন্তর সেদিন মরবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : হা. ১৭৮২) অর্থাৎ সবাই থাকবে মন মরা অবস্থায়, কিন্তু ঈদের রাত্রে ইবাদতকারী থাকেব প্রফুল্লচিত্ত অবস্থায়, যার ছাপ তার চেহারায়ও ফুটে উঠবে।

 

পূণ্যময় জিলহজের প্রথম দশক: করণীয় ও বর্জনীয়

 

৬। সামর্থবানরা ঈদের দিন কুরবানি করা। ১০ই জিলহজ বাদ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের ভেতরে কুরবানি করার সামর্থবানদের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি দিন।’  (সুরা কাউসার : ৩) এটা আমাদের আদি পিতা হযরত ইবরাহিম এর একটি সুন্নত। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছ, হযরত জায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, আমাদের সঙ্গীরা রাসুল সা.কে কুরবানি সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করল, এটা কী? রাসুল সা. বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের সুন্নত।সাহাবার আবার জিঙ্গেস করল, এতে কী লাভ হবে?

রাসুল সা. ইরশাদ করলেন, প্রতিটি পশমের বিনিমিয়ে একটি করে নেকি লেখা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : হা. ১৯২৮৩) অপর হাদিসে যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করবে না তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘তারা যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ : হা. ৮২৭৩) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উক্ত আমলগুলো বুঝে যথাযথভাবে আমলের তাওফিক দান করুন, আমিন!

[লেখক : সহকারী মুফতি, জামিআতুল আবরার দাওয়াতুস সুন্নাহ (কাঁচপুর মাদরাসা) কাঁচপুর, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।]

Leave a Comment