চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখার আহ্বান

চাঁদাবাজির লাগামহীন দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য পরিবহন, পাইকারি বাজার ও সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন ধাপে চাঁদাবাজি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের দামে, যা আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা না গেলে রোজার আগে বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব উদ্বেগ ও দাবি তুলে ধরা হয়। ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজার ও বাণিজ্য সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এতে অংশ নেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বুধবার (১২ নভেম্বর) ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত এফবিসিসিআই ভবনের মিলনায়তনে। এতে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক আবদুর রহমান খান।

সভায় পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, করপোরেট পর্যায়ের কিছু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী সাধারণ মানুষের ওপর অযৌক্তিক চাপ তৈরি করছে। মাত্র ৩ টাকার একটি মোড়ক পরিবর্তন দেখিয়ে পণ্যের দাম ৩০–৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজির প্রলয় শুরু হয়ে গেছে, বিশেষ করে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে। ট্রাক, পিকআপ বা কাভার্ডভ্যান চলাচলের সময় বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা দিতে হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।

ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, “সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও চাঁদাবাজদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ শোনা যায়। এটি বন্ধ না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।” তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যেন চাঁদাবাজি বন্ধে দৃশ্যমান ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন বলেন, চাঁদাবাজিমুক্ত ব্যবসা পরিবেশ তৈরি করতে হলে শুধু অভিযান নয়, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ জরুরি। তাঁর মতে, “কারা চাঁদা নিচ্ছে, কোথায় নিচ্ছে—এই তথ্য ব্যবসায়ীদের কাছেই সবচেয়ে বেশি থাকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সভায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। এজন্য বড় আমদানিকারক, মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের আগাম সমন্বয় ও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার তদারকি সাধারণত খুচরা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে, অথচ প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ ও মুনাফার বড় অংশ আসে পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায় থেকে। মিলমালিকরা প্রায়ই তদারকির বাইরে থেকে যান, ফলে বাজারে ভারসাম্য নষ্ট হয়।

সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক আবদুর রহমান খান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতি অনুরোধ থাকবে—পণ্য পরিবহন যেন নির্বিঘ্ন হয় এবং কোথাও কোনো চাঁদাবাজি না ঘটে।” তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিও আহ্বান জানান, যেন বাজার তদারকির সময় ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়।

তিনি আরও বলেন, রোজার আগে শুধু দাম নিয়ন্ত্রণ নয়, খাদ্যে ভেজাল রোধ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আমার আহ্বান—ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এতে ভোক্তার আস্থা বাড়বে এবং বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসবে।”