ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ফেরি চলাচল স্থগিত

ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট পাটুরিয়া–দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সাময়িকভাবে সব ধরনের ফেরি সার্ভিস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে মাঝ পদ্মা নদীতে যানবাহনবোঝাই তিনটি ফেরি আটকে পড়েছে এবং দুই পাড়ের ঘাট এলাকায় তীব্র যানজট ও ব্যাপক যাত্রীভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব দ্রুত বেড়ে যায়। দৃশ্যমানতা এতটাই কমে আসে যে ফেরির ব্রিজ থেকে আশপাশের নৌযান, নদীর গতিপথ কিংবা তীরভূমি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না। নৌপথে এ অবস্থায় চলাচল অব্যাহত রাখা মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই ফেরি মাস্টারদের সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, কুয়াশার মধ্যে দিকনির্দেশনা হারালে ফেরির সঙ্গে ফেরি বা ছোট নৌযানের সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকে, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারে।

ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় মাঝ পদ্মা নদীতে নোঙর করে রাখা হয়েছে রো-রো ফেরি শাহ পরান, রো-রো ফেরি গোলাম মাওলা এবং ফেরি বাইগার। এসব ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে। দীর্ঘ সময় নদীর মাঝখানে আটকে থাকায় ফেরিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফেরিগুলো গন্তব্যের দিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

এদিকে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে চলাচলের অপেক্ষায় আরও একাধিক ফেরি আটকে রয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রাজবাড়ী, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশালসহ বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। অনেক চালক ও যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুস সালাম বলেন, “ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে এসেছে। ফেরি মাস্টারদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কুয়াশা কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।”

তিনি আরও জানান, শীত মৌসুমে বিশেষ করে গভীর রাত ও ভোরের দিকে নদী এলাকায় কুয়াশার প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এ সময় প্রতিদিন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ফেরি চালু বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ও সাময়িক সমস্যা, যা আবহাওয়া অনুকূলে এলেই কেটে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা। অনেক ট্রাকে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, শাকসবজি, মাছ, কৃষিপণ্য ও শিল্পকারখানার কাঁচামাল। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলে এসব পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। একই সঙ্গে যাত্রীদের মধ্যেও চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

ঘটনার সারসংক্ষেপ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিচের টেবিলে তুলে ধরা হলো—

বিষয় | তথ্য
সময় | বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে
কারণ | ঘন কুয়াশা ও দৃশ্যমানতা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া
নৌরুট | পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া
বন্ধের ধরন | সাময়িকভাবে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ
মাঝ নদীতে আটকে ফেরি | শাহ পরান, গোলাম মাওলা, বাইগার
দায়িত্বশীল সংস্থা | বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)
প্রভাবিত যোগাযোগ | ঢাকা–দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল সড়ক যোগাযোগ
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত | কুয়াশা কাটলেই ধাপে ধাপে ফেরি চালু

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৃশ্যমানতা নিরাপদ পর্যায়ে এলেই পর্যায়ক্রমে ফেরি সার্ভিস পুনরায় চালু করা হবে। ততদিন পর্যন্ত যাত্রী ও চালকদের ধৈর্য ধারণ করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।