কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়ে ঋণ বাড়বে ক্ষুদ্র শিল্পে

নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে কৃষি খাত ও কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প—সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও একটি বড় ছাড় দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে একই পরিমাণ অর্থে ব্যাংকগুলো আরও বেশি ঋণ দিতে পারবে। এর ফলে এসব খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়বে এবং ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাও বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড বকেয়া ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ এবং বিশেষ উল্লেখযোগ্য (এসএমএ) ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তবে নতুন ছাড় অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএমএসএমই খাতের আওতায় থাকা সব অশ্রেণিকৃত (স্ট্যান্ডার্ড ও এসএমএ) স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ এবং সিএমএসএমই শিল্প উদ্যোগের ঋণের জন্য প্রভিশনের হার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ০.৫০ শতাংশ করা হলো। অর্থাৎ প্রভিশনের বোঝা অর্ধেকে নেমে এলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো ঋণ গ্রহণ কমিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও স্বল্প ঝুঁকির খাত—কৃষি ও সিএমএসএমই—তে ঋণ দিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছিল। এই অনাগ্রহ কাটাতে এবং বাজারে বিনিয়োগের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতেই নতুন ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণে আরও আগ্রহী হবে।

ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এই ছাড়ের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল। পরে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকেও তারা একই প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপরই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে।

সরকার ইতিমধ্যে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের জন্য সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। চলতি বছরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। জুন পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়—সামগ্রিক ঋণের মাত্র ১৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে গেছে, যা গত দুই বছরের তুলনায় কম। জাতীয় এসএমই নীতি অনুযায়ী, ২০২৯ সালের মধ্যে এই হার ২৭ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাত দেশে কর্মসংস্থান তৈরির প্রধান চালিকা শক্তি। প্রভিশনিং ছাড়ের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ঋণপ্রবাহ বাড়বে, উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।


প্রভিশন পরিবর্তনের তথ্য (টেবিল)

ঋণের ধরনপূর্বের প্রভিশন হারনতুন প্রভিশন হারকার্যকর থাকবে
কৃষিখাতের স্বল্পমেয়াদি স্ট্যান্ডার্ড/এসএমএ ঋণ১%০.৫০%৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত
সিএমএসএমই শিল্প উদ্যোগের স্ট্যান্ডার্ড/এসএমএ ঋণ১%০.৫০%৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত