কুমিল্লার পিপুলিয়া মাদরাসায় বই খুলে অনার্স পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় ফাজিল স্নাতক (অনার্স) পরীক্ষায় এক নজিরবিহীন ও লজ্জাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। উপজেলার পিপুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসায় পরীক্ষার হলের ভেতর খোদ শিক্ষকের উপস্থিতিতেই পরীক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে বই দেখে উত্তর লিখছেন। নৈতিকতার অবক্ষয়ের এই চরম দৃষ্টান্তটি সম্প্রতি ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, পরীক্ষার হলের প্রতিটি টেবিলে বই খোলা রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই উত্তরপত্র পূরণ করছেন। কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে নিয়োজিত শিক্ষকরা এই অনিয়ম দেখেও বাধা না দিয়ে বরং নিরব সম্মতি দিচ্ছেন।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ:

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) ওই মাদরাসা কেন্দ্রে ফাজিল প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। উক্ত পরীক্ষায় মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষাটি নিজ মাদরাসা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার সুবাদে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এই নজিরবিহীন ‘ওপেন বুক’ পরীক্ষার সুযোগ করে দেন। একটি সম্মানসূচক স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষায় এমন গণনকলের দৃশ্য শিক্ষা সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ:

এই ঘটনার মূলে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, কেন্দ্র ফি বাবদ ৫০০ টাকা এবং পরীক্ষায় অবৈধভাবে বই দেখার সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে আরও ৬০০ টাকা—অর্থাৎ মোট ১১০০ টাকা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

নিচে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রধান তথ্যসমূহ একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:

পিপুলিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষার অনিয়মের চিত্র

ক্যাটাগরিবিস্তারিত তথ্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামপিপুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, কুমিল্লা।
পরীক্ষার ধরনফাজিল স্নাতক (অনার্স) প্রথম ও তৃতীয় বর্ষ।
ঘটনার তারিখ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫।
ভিডিওর উৎসসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল (২ মিনিট ২৭ সেকেন্ড)।
অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী৪৪ জন।
আর্থিক অভিযোগজনপ্রতি ১১০০ টাকা আদায়ের দাবি।
প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তিমাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ)।
বর্তমান অবস্থাতদন্ত কমিটি গঠন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও তদন্ত:

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মো. তৈয়ব হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। আমরা ভিডিওটি সংগ্রহ করেছি এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় জানিয়েছেন যে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর জড়িত শিক্ষক এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই ঘটনাটি শুধু কুমিল্লার জন্যই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি অশনিসংকেত। ফাজিল ও কামিল পর্যায়ের পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং নকলমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের এমন কঠোর হস্তক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।