কাব্যিক অনুভূতি, গভীর আবেগ ও মেলানকোলি সুরের মেলবন্ধনে আবারও শ্রোতাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। তাঁর নতুন গান ‘এই ব্যথা’ যেন ভালোবাসার না বলা গল্প, নিঃশব্দ অভিমান আর ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসের এক সংবেদনশীল সংগীত-ভাষ্য। সময়ের সঙ্গে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করলেও আবেগনির্ভর গানে বাপ্পার যে শক্ত অবস্থান, এই গান তারই আরেকটি প্রমাণ।
‘এই ব্যথা’ মূলত এমন এক সম্পর্কের কথা বলে, যেখানে অনুভূতি প্রকাশ পায় না শব্দে, বরং জমে থাকে হৃদয়ের গভীরে। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দূরত্ব, বলা না-পারা অভিযোগ, কিংবা নীরব কষ্ট—সব মিলিয়ে গানটি শ্রোতাকে নিয়ে যায় নিজের জীবনের কোনো না কোনো স্মৃতির ভেতরে। বাপ্পা মজুমদারের কণ্ঠে সেই অনুভূতির প্রকাশ হয়েছে পরিণত, সংযত অথচ গভীর আবেশে।
গানটির কথা লিখেছেন মাহি ফ্লোরা। তাঁর লেখায় রয়েছে সহজ শব্দচয়ন, কিন্তু অনুভূতির গভীরতা অসাধারণ। প্রতিটি পঙ্ক্তি যেন আলতো করে শ্রোতার মনে আঘাত করে, আবার সেই আঘাতেই জন্ম নেয় এক ধরনের প্রশান্ত বিষণ্নতা। সুর করেছেন এহসান রাহি, যিনি মেলানকোলির আবহ বজায় রেখে গানটির আবেগকে ধীরে ধীরে বিস্তৃত করেছেন। সুরের ওঠানামা, থেমে যাওয়া আর নীরবতার ব্যবহারে গানটি পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা।
সংগীতায়োজনের দায়িত্বে ছিলেন আমজাদ হোসেন। তাঁর পরিমিত ও সংবেদনশীল অ্যারেঞ্জমেন্ট গানটিকে বাড়তি কোনো জাঁকজমক ছাড়াই হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। অতিরিক্ত যন্ত্রসংগীতের বদলে এখানে প্রাধান্য পেয়েছে অনুভূতির জায়গা, যেখানে বাপ্পার কণ্ঠই হয়ে উঠেছে মূল বাহন। পুরো গানজুড়ে এক ধরনের শান্ত বিষণ্নতা ও চাপা কষ্ট অনুভূত হয়, যা শ্রোতাকে নিরব শ্রবণে ডুবিয়ে রাখে।
ধ্রুব মিউজিক স্টেশন বা ডিএমএস-এর ব্যানারে গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছেন শুভব্রত সরকার। ভিডিওটিতে প্রচলিত গল্প বলার ধারা থেকে সরে এসে প্রতীকী ও শিল্পিত ভিজ্যুয়াল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। রঙের ব্যবহার, ক্যামেরার ফ্রেমিং ও দৃশ্যের বিন্যাস গানটির আবেগকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। নির্মাতাদের মতে, এই ভিডিও দর্শকদের জন্য এক ভিন্নধর্মী ও চিন্তাশীল অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।
সম্প্রতি ধ্রুব মিউজিক স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয় গানটির প্রকাশনা উৎসব। সেখানে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংগীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ গীতিকার ও সুরকার তরুণ মুন্সী, জুয়েল মোর্শেদ, লুৎফর হাসান, কিশোর দাসসহ আরও অনেকে। শিল্পী, স্রষ্টা ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে আয়োজনটি পরিণত হয় এক আবেগঘন মিলনমেলায়।
নতুন গান নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাপ্পা মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন পর এমন আন্তরিক একটি আয়োজন করতে পেরে তিনি সত্যিই আনন্দিত। তাঁর মতে, এই গানের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই মন থেকে কাজ করেছেন। তিনি আরও জানান, গানটির প্রকাশের দিনটি তাঁর জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ সেদিন তাঁর বড় মেয়ের জন্মদিন ছিল। আনন্দের এই দিনে গান প্রকাশ পাওয়ায় তিনি আলাদা এক আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, ‘এই ব্যথা’ গানটি ও এর ভিডিও শ্রোতাদের ভেতরে ভিন্ন এক অনুভূতির দরজা খুলে দেবে।
ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ জানান, বাপ্পা মজুমদারের মতো একজন গুণী শিল্পীর নতুন গান প্রকাশ করতে পেরে তারা গর্বিত। তাঁর আশা, ‘এই ব্যথা’ অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে এবং দীর্ঘদিন ধরে সংগীতপ্রেমীদের প্লেলিস্টে থেকে যাবে।
