ওসামা বিন লাদেন, যার পুরো নাম ওসামা বিন মুহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন, সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন এবং কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আল–কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা ছিলেন। সাধারণত তিনি ওসামা বিন লাদেন বা উসামা বিন লাদেন নামে অধিক পরিচিত। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র (টুইন টাওয়ার) ও অন্যান্য স্থানে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকেই দায়ী করা হয়, যেখানে প্রাণ হারান তিন হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষ। এই নজিরবিহীন হামলার পর তিনি আমেরিকার দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রূপে চিহ্নিত হন। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে। দীর্ঘ এক দশক ধরে অনুসন্ধান চালানোর পর, ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের একটি নিরাপদ আশ্রয়ে মার্কিন কমান্ডোদের গোপন অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। তবে তার মৃত্যুর পরও আল–কায়েদার সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেমে যায়নি।
Table of Contents
ওসামা বিন লাদেনের ইতিহাস
কিভাবে উত্থান হলো বিন লাদেনের
ওসামা বিন লাদেন ১৯৫৭ অথবা ১৯৫৮ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বিন লাদেনের ৫২ সন্তানের মধ্যে ১৭তম। তাঁর পিতা ছিলেন সৌদি আরবের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, যিনি রাজপরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে নির্মাণ খাতে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন। বিন লাদেনের বেশিরভাগ ভাই পশ্চিমা দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ওসামা একেবারেই আলাদা ছিলেন — তাঁর জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী।
জেদ্দার একটি সম্মানিত স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর, তরুণ বয়সেই তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা সে সময়ের সৌদি সমাজে প্রচলিত ছিল। ছাত্রজীবনেই তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন, একটি সংগঠন যা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে কলেজে পড়ার সময় তাঁর জীবনপ্রবাহ নতুন দিকে মোড় নেয়। তিনি তখন কট্টরপন্থী ইসলামী চিন্তাবিদ আবদুল্লাহ আজমের মতবাদে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। আজম বিশ্বাস করতেন, বিশ্বের যেখানেই মুসলমানরা নির্যাতিত হবে, সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিহাদে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ধর্মীয় দায়িত্ব। এই আদর্শ তরুণ বিন লাদেনের মনে তীব্র আলোড়ন তোলে। একই সময়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে পশ্চিমা শক্তির প্রভাব এবং ইসলামী মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে গভীর অসন্তোষ অনুভব করতে শুরু করেন।
এই আদর্শিক প্রস্তুতি আর ধর্মীয় অনুরাগের মিশ্রণই পরবর্তী সময়ে ওসামা বিন লাদেনকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধের ময়দানে টেনে নিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা, যা পরে বিশ্ব রাজনীতিতে বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করে।

আল–কায়েদার দ্বারা করা প্রথম হামলা
কয়েক বছরের ব্যবধানে সৌদি আরব ত্যাগ করে সুদানে আশ্রয় নেন ওসামা বিন লাদেন। সেখান থেকেই আল–কায়েদা তাদের সংগঠিত উপস্থিতির প্রথম ইঙ্গিত দেয়। ইয়েমেনে অবস্থিত একটি হোটেলে বোমা হামলা চালানো হয়, যেখানে আমেরিকান সেনারা অবস্থান করছিলেন।
এই আমেরিকান সেনারা সোমালিয়ায় একটি শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও ওই হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত হননি, তবে প্রাণ হারান দুইজন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক।
এই ঘটনার পর থেকেই আল–কায়েদা বিশ্বের নানা প্রান্তে একের পর এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালাতে শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা সোমালিয়ার দস্যু গোষ্ঠীগুলোকে সশস্ত্র হামলার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ১৯৯৩ সালে সোমালিয়ার মোগাদিসু শহরে এক হামলায় ১৮ জন মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়, যার পেছনে আল–কায়েদার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে।
একই বছরে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গেও আল–কায়েদার সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে। এর দুই বছর পর, ১৯৯৫ সালে, মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগও ওঠে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
এছাড়া ১৯৯৫ সালেই সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালানো হয়। পরের বছর, ১৯৯৬ সালে, সৌদি আরবের খোবার টাওয়ারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় আল–কায়েদা, যাতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানে থাকা
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ চালালে, ওসামা বিন লাদেন ও আব্দুল্লাহ আজম আফগান প্রতিরোধে যোগদানের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী শহর পেশোয়ারে আসেন। যদিও তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, তবে আফগান যোদ্ধাদের সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা অর্থায়ন, লজিস্টিক সহায়তা এবং যোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা করতে কাজ করেন। এই উদ্দেশ্যে তারা গড়ে তোলেন ‘মাকতাব আল-খিদামাত’ (এমএকে) নামের একটি সংগঠন, যা বিশ্বজুড়ে আফগান যোদ্ধাদের সমর্থনে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিন এবং অ্যারিজোনার টুকসনসহ বিভিন্ন স্থানে শাখা স্থাপন করে। এসব শাখার মাধ্যমে ‘আফগান আরব’ নামে পরিচিত অভিবাসী যোদ্ধাদের সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ পরিচালিত হতো।
ওসামা বিন লাদেনের জঙ্গী সংগঠন তৈরি ও সৌদিতে ফিরে যাওয়া
হিস্টোরি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালের দিকে ওসামা বিন লাদেন নিজস্ব একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন, যার নাম দেন ‘আল–কায়েদা’। শুরুতে এই সংগঠনটি সরাসরি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর বদলে প্রতীকী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কৌশল অবলম্বন করে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর, যখন সোভিয়েত বাহিনী ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান ত্যাগ করে, তখন ওসামা সৌদি আরবে ফিরে যান।
সৌদি আরবে ফিরে আসার পর, বিন লাদেন আল–কায়েদাকে আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে অর্থ সংগ্রহে মনোনিবেশ করেন। তাঁর ক্রমবর্ধমান ইসলামিক কট্টরপন্থী বক্তৃতা ও কর্মকাণ্ড সৌদি রাজপরিবারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি রাজপরিবার আশঙ্কা করেছিল, বিন লাদেনের চরমপন্থী মতাদর্শ দেশটির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। রাজপরিবার বিন লাদেনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে; এমনকি তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁর পাসপোর্টও জব্দ করে নেয়।
পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখল করে নেয়। এই সঙ্কটের মুখে ওসামা বিন লাদেন সৌদি সরকারকে প্রস্তাব দেন, আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অভিজ্ঞ ‘আফগান আরব’ যোদ্ধাদের সৌদি সীমান্ত রক্ষায় নিয়োগের জন্য। কিন্তু সৌদি সরকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা চায়।
সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে ওসামা গভীরভাবে অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। তিনি পশ্চিমাদের সামরিক উপস্থিতিকে ইসলামের পবিত্র ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ হিসেবে দেখেন। এর ফলে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতি বিদ্বেষ আরও ঘনীভূত হয়। হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওসামা বিন লাদেন ঘোষণা দেন, “একদিন আল–কায়েদা বিশ্ব নেতৃত্বে পৌঁছাবে, আমেরিকা নয়।” এই সময় থেকেই তিনি ধীরে ধীরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন।
আফগানিস্তানে লাদেনের যাত্রা
১৯৯৬ সালে, বিভিন্ন হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে ওসামা বিন লাদেন আশ্রয় নেন আফগানিস্তানে। তখন পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৯৮ সালের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে ভয়াবহ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা। ওই হামলায় ২১৩ জন নিহত হন এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ আহত হন।
২০০০ সালে ইয়েমেনের এডেন বন্দরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কোল-এর ওপর আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়, যাতে ১৭ জন মার্কিন নাবিক প্রাণ হারান। এসব হামলার দায়ও সরাসরি গ্রহণ করেন ওসামা বিন লাদেন।
সবশেষে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায় আল-কায়েদা, যেটিতে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন। এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তর করতে চাপ প্রয়োগ করে। তালেবান সরকার তা অস্বীকার করলে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করে।
মার্কিন বাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হলো লাদেনের
২০১১ সালের ১ মে রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী নেভি সিল টিমের সদস্যরা পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে গোপন অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। লাদেন ওই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নিকটবর্তী এক বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। পাকিস্তান সরকারকে অগ্রিম কোনো তথ্য না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে অভিযান চালায়। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন গোয়েন্দারা লাদেনের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নজরদারি শুরু করে।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউস থেকে তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে পুরো অভিযান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। অভিযান সফল হওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন, বিশ্বের সবচেয়ে খোঁজাখুঁজির তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরে জানানো হয়, লাদেনের মৃতদেহ ইসলামী রীতিতে গভীর সমুদ্রে দাফন করা হয়েছে।
ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, আত্মগোপনের সময়ে লাদেন তাঁর পরিবার নিয়ে অ্যাবোটাবাদের আগে হরিপুরে একটি বাড়িতে বসবাস করেছিলেন। গোটা পাকিস্তানে আত্মগোপনের সময় তিনি মোট পাঁচটি ভিন্ন বাড়িতে ছিলেন এবং ২০০৫ সাল থেকে অ্যাবোটাবাদের বাড়িটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের ২০১২ সালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অ্যাবোটাবাদে লুকিয়ে থাকার সময় লাদেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। স্ট্র্যাটফর নামক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁস হওয়া ই-মেইল বার্তায় দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের মধ্যম ও জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা লাদেনের অবস্থানের বিষয়ে অবগত ছিলেন। এ তথ্য প্রথম ফাঁস করে বিতর্কের জন্ম দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস, যারা স্ট্র্যাটফরের ৫০ লাখেরও বেশি ই-মেইল বার্তা প্রকাশ করে। একটি ফাঁস হওয়া ই-মেইলে বলা হয়, ‘একজন পাকিস্তানি জেনারেলসহ আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে ওসামা বিন লাদেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতেন।’
আল–কায়েদার বর্তমান অবস্থা কি
আল–কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু বিন লাদেন নিহত হলেও আল–কায়েদার হুমকি পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি—এ নিয়ে নানা মহলে এখনও উদ্বেগ রয়েছে। সংগঠনটির কার্যক্রম থেমে থাকেনি বরং বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছে।
বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আল–কায়েদার নেতৃত্বে আসেন আয়মান আল–জাওয়াহিরি। তার বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লেও জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মৃত্যুর কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। বরং ধারণা করা হচ্ছে, তিনি এখনও জীবিত আছেন, তবে শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন।
ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর কিছু সময় পরই মধ্যপ্রাচ্যে আরেক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) আত্মপ্রকাশ করে। আল–কায়েদার চরমপন্থী আদর্শে অনুপ্রাণিত আবু বকর আল–বাগদাদিকে খলিফা ঘোষণা করে আইএস সিরিয়া ও ইরাকের বেশ কিছু এলাকা দখল করে নেয়। একের পর এক হামলা চালিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের নতুন শঙ্কা তৈরি করে এবং কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়।
এদিকে, ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করার পর নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, আল–কায়েদা আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তালেবানের ছত্রছায়ায় আল–কায়েদা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়মান আল–জাওয়াহিরি সম্ভবত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লুকিয়ে আছেন।
এছাড়া জাতিসংঘের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের সঙ্গে আল–কায়েদার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। যদিও তালেবান নিজেদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে আল–কায়েদার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তবুও বাস্তবে আল–কায়েদা তালেবানের আশ্রয়ে থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আল–কায়েদা হয়তো তার পুরোনো শক্তি ফিরে পায়নি, কিন্তু তারা এখনো সক্রিয় এবং বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।