ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্রদূতকে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৯টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তাদের বর্তমান দায়িত্বের মেয়াদ আগামী জানুয়ারির মধ্যেই শেষ হবে।
এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বাস্তব প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কূটনীতিকদের নিয়োগ দিতে চান, যারা তার রাজনৈতিক দর্শন, নিরাপত্তা নীতি এবং বৈশ্বিক কৌশলের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ে কাজ করবেন। বিশেষ করে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও অভিবাসন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রদূতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
যেসব রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তারা মূলত বাইডেন প্রশাসনের শেষ পর্যায়ে অথবা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে সাময়িকভাবে দায়িত্বে বহাল ছিলেন। সম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো নতুন নির্দেশনায় তাদের জানানো হয়, বর্তমান মিশনে তাদের সময় শেষের পথে। তবে প্রশাসন স্পষ্ট করেছে, এই সিদ্ধান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের চাকরি হারাচ্ছেন না এবং চাইলে ভবিষ্যতে অন্য দায়িত্বেও নিয়োজিত হতে পারবেন।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ও প্রচলিত প্রক্রিয়া। নতুন প্রশাসন এলে কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্বে পরিবর্তন আসাই নিয়ম। তবে এবারের পরিবর্তনের ব্যাপকতা ও সময় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলে এই রদবদলের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি পড়বে। আফ্রিকার ১৩টি এবং এশিয়ার ৬টি দেশে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের পথ পরিষ্কার হচ্ছে।
কিছু সাবেক কূটনীতিক ও আইনপ্রণেতা এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, একসঙ্গে এত বেশি রাষ্ট্রদূত পরিবর্তনের ফলে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে সংঘাতপূর্ণ বা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে হঠাৎ নেতৃত্ব পরিবর্তন নীতিগত অস্পষ্টতা তৈরি করতে পারে।
তবে প্রশাসনের যুক্তি ভিন্ন। কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রদূতরা প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সুতরাং কাকে তিনি এই দায়িত্বে রাখবেন, তা একান্তই তার সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, স্পষ্ট রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ছাড়া কার্যকর কূটনীতি সম্ভব নয়, আর সেই লক্ষ্যেই এই পরিবর্তন।
সব মিলিয়ে, এই রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বৈদেশিক নীতির রূপরেখা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। আগামী মাসগুলোতে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কূটনীতিতে কী ধরনের বার্তা দেওয়া হয়, সেদিকেই এখন নজর আন্তর্জাতিক মহলের।
