এনসিপি নেতাকে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার সেই নারীর পরিচয়

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির এক কেন্দ্রীয় নেতাকে গুলির ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। এ ঘটনায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব শিকদার (৪২)। তিনি জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘটনাটি নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে ঘটে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় জেলা জাতীয় যুব শক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব মোসা. তনিমা ওরফে তন্বীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় তনিমা ওই ফ্ল্যাটেই উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাডাঙ্গা এলাকার ওই ফ্ল্যাটটি মোতালেব শিকদার ও তনিমা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে তনিমা বিবাহিত এবং তার স্বামীর নাম তানভির শেখ। ওই বাসায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম জানান, রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে মোতালেব শিকদার দুই সহযোগীসহ তনিমার বাসায় যান। সারারাত সেখানেই অবস্থান করেন তারা। সোমবার সকালে সেখানে ৪–৫ জনের একটি দল প্রবেশ করে। তারা মোতালেবকে মারধর করে এবং অর্থ দাবি করে। একপর্যায়ে ভয় দেখাতে গুলি করা হলে সেটি তার মাথার চামড়া ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আহত অবস্থায় মোতালেব নিজেই হেঁটে হাসপাতালে যান। ঘটনার পরপরই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, তনিমাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না। অস্ত্রধারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর সোমবার রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মোতালেব শিকদারের পরিবার। সেখানে তার স্ত্রী দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে মোতালেবকে ওই বাসায় নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধী ও অস্ত্রের উৎস শনাক্ত করা গেলে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হবে।

মোতালেব শিকদার পেশায় একজন ট্রাকচালক। তিনি বটিয়াঘাটা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। রাজনৈতিকভাবে তিনি অতীতে আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সম্প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে এনসিপিতে যোগ দিয়ে জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।

তবে খুলনা মহানগর এনসিপির সংগঠক রাহাত হোসেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এ ঘটনা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং এর সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

নামপরিচয়সংশ্লিষ্টতা
মোতালেব শিকদারশ্রমিক নেতাজাতীয় শ্রমিক শক্তি, এনসিপি
মোসা. তনিমা (তন্বী)যুব নেত্রীজেলা জাতীয় যুব শক্তি
রহিমা আক্তার ফাহিমাবাদীমোতালেবের স্ত্রী
তাজুল ইসলামপুলিশ কর্মকর্তাখুলনা মহানগর পুলিশ