নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার শিবপুর গ্রামে শনিবার সকালে ঘটে যাওয়া এক ট্র্যাজেডি আবারও দেখিয়ে দিল গ্রামীণ কৃষিকাজে অনিরাপদ বৈদ্যুতিক ব্যবহারের ভয়াবহতা। ইঁদুর মারার জন্য পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন মো. নুরুল হুদা, যিনি সম্প্রতি কাতার থেকে দেশে এসেছিলেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর পরিবারে এখন নেমে এসেছে অশেষ শোক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. রিয়াজ বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য খোলা বিদ্যুতের সংযোগ ব্যবহার করে ফাঁদ তৈরি করেন। গ্রামে এটি নতুন কিছু নয়—অনেক কৃষকই ফসল বাঁচাতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু এসব ফাঁদ প্রাণঘাতী হতে পারে—তা আবারও প্রমাণ হলো নুরুল হুদার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
সকালে নুরুল হুদা নিজের জমিতে নতুন বীজতলা প্রস্তুত করতে গেলে অসাবধানতাবশত রিয়াজের বৈদ্যুতিক ফাঁদের তারে পা দেন। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান তিনি আগেই মারা গিয়েছেন।
নিহতের শ্যালক মো. পারভেজ আলম জানান, “রিয়াজ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা ভাবতেই পারিনি যে এমন বিপজ্জনকভাবে ফাঁদ পাতা হবে। কোনো সতর্কবার্তাও ছিল না।” তিনি আরও বলেন, পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি, কারণ তারা মনে করছেন ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত হলেও এটি ক্ষমার অযোগ্য অবহেলা।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ায় কৃষকেরা সস্তা ও সহজ সমাধান হিসেবে বিদ্যুতের ফাঁদ ব্যবহার করছেন। কিন্তু এসব ফাঁদে মানুষ, পশু—সবাই সমানভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব কাজ নিয়ম ভেঙেই চলছে।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, “পরিবার কোনো অভিযোগ না করলেও পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অপমৃত্যু মামলা নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, গ্রামে কৃষির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যুতের খোলা সংযোগ ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত। একইসঙ্গে কৃষকদের আধুনিক ও নিরাপদ ইঁদুর দমন পদ্ধতি শেখানো জরুরি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
মো. নুরুল হুদার মৃত্যু তাই শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি একটি বার্তা—অবহেলা ও অনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ব্যবহারে মানুষের জীবন যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তার নির্মম উদাহরণ।
