সৌদি আরবের বন্দরনগরী আল কুনফুদাহ-তে উটের মূত্র বলে মানুষের মূত্র বিক্রির অভিযোগে এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। অভিযুক্তের নাম মোহাম্মদ খুরশিদ। তাঁর দোকান থেকে ৭০টিরও বেশি বোতল মূত্র জব্দ করেছে স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা।
Table of Contents
উটের মূত্রের নামে মানুষের মূত্র বিক্রি

ঘটনার সূত্রপাত
বহু বছর ধরেই মোহাম্মদ খুরশিদের দোকানে ঐতিহ্যবাহী ওষধি গুণসম্পন্ন উটের মূত্র বিক্রি হচ্ছিল বলে দাবি করা হয়। উটের মূত্র স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রতিকারে ব্যবহার করা হয়, বিশেষত আরব সংস্কৃতিতে এর চিকিৎসামূলক মূল্য রয়েছে বলে বিশ্বাস প্রচলিত।
তবে সম্প্রতি কয়েকজন নিয়মিত ক্রেতা অভিযোগ করেন, বিক্রিত মূত্রের স্বাদে পরিবর্তন এসেছে এবং তা উটের মূত্রের মতো মনে হচ্ছে না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথভাবে দোকানে রেইড চালায়।

প্রাথমিক তদন্ত ও জব্দকৃত নমুনা
অভিযানে দোকান থেকে ৭০টিরও বেশি বোতল ভর্তি মূত্র জব্দ করা হয়।
পরে মোহাম্মদ খুরশিদের নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও বোতল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক পরীক্ষায় ধারণা করা হচ্ছে, বোতলগুলোর মূত্র মানুষের — এবং তা ব্যবসায়ীর নিজের বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলছে
উদ্ধারকৃত বোতলগুলো বর্তমানে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল হাতে পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য বিভাগ।
উটের মূত্র: আরব সংস্কৃতি ও বিশ্বাস
উটের মূত্র আরব বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ।
বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসাবিদ আভিসেনা (ইবনে সিনা) তাঁর গ্রন্থ “The Canon of Medicine” এ উল্লেখ করেছেন যে, উটের দুধ ও মূত্র লিভারের রোগের জন্য উপকারী হতে পারে।
আরবের স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে উটের-মূত্রে পানের রেওয়াজ রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে মূত্রে ওষধি গুনাগুন রয়েছে। এজন্য মুত্র সংগ্রহ ও বিতরণ বৈধ। মুত্র দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পানিয়ও রয়েছে।

উটের দুধ ও মূত্রের ওষধি বিশ্বাস ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট
উটের দুধ ও মূত্র দীর্ঘদিন ধরে আরব অঞ্চলে প্রাকৃতিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলিম সমাজে এই বিশ্বাসের একটি প্রাচীন ভিত্তি রয়েছে, যার উৎস ধর্মীয় গ্রন্থ ও প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যার উল্লেখযোগ্য রচনাতেও পাওয়া যায়।
Canon of Medicine ও ইবনে সিনার বর্ণনা
বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিদ আভিসেনা (ইবনে সিনা) তাঁর রচিত “The Canon of Medicine” (আল-কানুন ফি আল-তিব) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,
“উটের দুধ এবং আরবীয় উটের মূত্র লিভারজনিত রোগের চিকিৎসায় উপকারী হতে পারে।”
এই মতামত পরবর্তীকালে বহু ইউনানী ও প্রাক-আধুনিক চিকিৎসাবিদ অনুসরণ করেছেন।
সহীহ হাদিসের ভিত্তি
উটের দুধ ও মূত্র পানে উপকারিতা সম্পর্কে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ রয়েছে, যা সহীহ বুখারী-তে বর্ণিত:
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত:
কিছু লোক মাদীনায় এসে আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হুকুম দেন,
“তোমরা আমার রাখালের সাথে উটগুলোর নিকট যাও, এবং উটের দুধ ও মূত্র পান করো।”
তারা উটের দুধ ও মূত্র পান করতে করতে সুস্থ হয়ে ওঠে।
কিন্তু পরে তারা ওই রাখালকে হত্যা করে এবং উটগুলো চুরি করে নিয়ে যায়।
নবী (সা.) তাদের ধরার নির্দেশ দেন। ধরা পড়ার পর তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হয় এবং চোখে আগুনের লোহা স্পর্শ করিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়।
[সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৮৬, অধ্যায়ঃ চিকিৎসা – كتاب الطب]
আধুনিক ফাতওয়া ও মতামত
এ বিষয়ে বহু আলেম, চিকিৎসাবিদ ও ইসলামিক স্কলারদের মত রয়েছে।
বিশ্বখ্যাত দাঈ ও ইসলামিক বক্তা ড. জাকির নায়েক উটের মূত্রের ওষধি ব্যবহারকে হাদিস দ্বারা সমর্থিত এবং সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
অনুরূপভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বহু শাইখ ও ফকীহ এই হাদিস ও ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে ফাতওয়া প্রদান করেছেন, তবে তারা এটিকে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিরীক্ষার আওতায় রাখার পরামর্শ দেন।
