ইসরায়েলের গুলি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর

দক্ষিণ লেবাননের উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তরেখায় রবিবার আরেকটি গুরুতর ঘটনা ঘটেছে—ইসরায়েলি সেনারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল)। ঘটনাটি এমন এক সময় হলো যখন সীমান্তজুড়ে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা পুনরায় বাড়ছে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা সেই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইউনিফিলের বক্তব্যে বলা হয়, যে স্থানে গুলি ছোড়া হয়—সেটি ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননের ভেতরে নির্মিত এক বিতর্কিত স্থাপনার কাছে। সেখানে মেরকাভা ট্যাঙ্ক থেকে ছোড়া ভারী মেশিনগানের গুলি শান্তিরক্ষীদের খুব কাছে এসে পড়ে, মাত্র পাঁচ মিটারের ব্যবধানে। স্বল্প ব্যবধানে এমন হামলা শান্তিরক্ষীদের সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রথমে দাবি করে, প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতিতে দূর থেকে দেখা দুই “সন্দেহভাজনকে” লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। পরবর্তী তদন্তে তারা স্বীকার করে, সেই দুই ব্যক্তি আসলে ইউনিফিল সদস্য ছিলেন, যারা নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল না; বরং “ভুল শনাক্তকরণ”।

শান্তিরক্ষীরা জানান, প্রায় আধা ঘণ্টা তারা জায়গা ছেড়ে সরতে পারেননি, কারণ ট্যাঙ্কটি তখনো ইসরায়েলি অবস্থানে স্থির ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে তারা নিরাপদে সরে যান।

জাতিসংঘের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব—যা ২০০৬ সালের ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধের অবসান ঘটায় এবং দক্ষিণ লেবাননে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দেয়—এই ঘটনাকে সেই প্রস্তাবের “গুরুতর লঙ্ঘন” হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইউনিফিল।

গত নভেম্বর ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ সংঘর্ষের পর যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটি টিকিয়ে রাখতে লেবাননের সেনাবাহিনী ও ইউনিফিল একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি কৌশলগত এলাকায় অব্যাহত উপস্থিতি, নিয়মিত বিমান ও স্থল হামলা এবং সীমান্ত বরাবর বাড়তে থাকা উত্তেজনা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে পরিচালিত ইসরায়েলি হামলার ব্যাখ্যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে সবসময়ই নিরপেক্ষ মনে হয়নি, কারণ এতে কখনো কখনো বেসামরিক এলাকা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। ফলে রবিবারের ঘটনার পর নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—যে অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন ভুলত্রুটি ভবিষ্যতে বৃহত্তর সংঘাতের দিকে পরিস্থিতিকে ঠেলে দিতে পারে কি না।

ইউনিফিল কঠোর ভাষায় বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর উচিত অবিলম্বে শান্তিরক্ষীদের নিকটবর্তী যেকোনো আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করা, কারণ এসব ঘটনা শুধু মিশনের নিরাপত্তা নয়, বরং সমগ্র সীমান্ত অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি আঘাত হানে।