ইংলিশ ক্রিকেটে ‘বাজবল’ ট্র্যাজেডি: ম্যাককালামের অপসারণ চান জিওফ্রে বয়কট

২০২২ সালে যখন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন বিশ্ব ক্রিকেটে এক নতুন দর্শনের জন্ম হয়েছিল—‘বাজবল’। অধিনায়ক বেন স্টোকস এবং কোচ ম্যাককালামের সেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট দর্শন শুরুর দিকে ইংল্যান্ডকে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছিল। প্রথম ১১টি টেস্টের ১০টিতেই জয়লাভ করে তারা ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই আক্রমণাত্মক মনোভাব এখন ইংল্যান্ডের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে চলতি অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর।

অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপর্যয়: একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চলমান অ্যাশেজ সিরিজে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে ইংল্যান্ড। হারের ধরনটি এতটাই লজ্জাজনক যে, ২৫ দিনের নির্ধারিত খেলার মধ্যে মাত্র ১১ দিনেই সিরিজের ফয়সালা হয়ে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্টোকস-ম্যাককালাম জুটির অধীনে ইংল্যান্ড এখন পর্যন্ত কোনো ৫ ম্যাচের সিরিজ জিততে পারেনি। ২০২৪ সাল থেকে তাদের জয়ের চেয়ে হারের পাল্লাই ভারি।

নিচে ম্যাককালামের মেয়াদে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্সের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেওয়া হলো:

ইংল্যান্ড টেস্ট দলের পারফরম্যান্স চিত্র (ম্যাককালাম যুগ)

ক্ষেত্রপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান
মোট টেস্ট ম্যাচ৪৪টি
সাফল্যের হার (জয়)২৫টি
ব্যর্থতার হার (হার)১৭টি
৫ ম্যাচের সিরিজ রেকর্ড৪টি সিরিজে অংশ নিয়ে একটিতেও জয় নেই
বর্তমান অ্যাশেজ দশা৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হার (প্রথম তিন ম্যাচেই)
মাঠের লড়াইয়ের সময়২৫ দিনের বিপরীতে মাত্র ১১ দিনে সিরিজ শেষ

জিওফ্রে বয়কটের কঠোর হুঁশিয়ারি

ইংল্যান্ডের সাবেক কিংবদন্তি ওপেনার জিওফ্রে বয়কট দলের এই ছন্নছাড়া অবস্থায় চরম ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ লেখা এক কলামে তিনি সরাসরি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বিদায় দাবি করেছেন। ৮৫ বছর বয়সী এই প্রবীণ ক্রিকেটার মনে করেন, ‘বাজবল’ দর্শনের অপমৃত্যু ঘটেছে এবং এখন পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।

বয়কটের মতে, স্টোকস এবং ম্যাককালাম সাধারণ বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “তারা জানে না কোথায় গর্ত খুঁড়ছে। যখন দেখা যাচ্ছে গর্ত খোঁড়া কাজ করছে না, তখন সেটা থামানো উচিত।” তিনি ইসিবি-র নীতিনির্ধারক রব কি-কে পরামর্শ দিয়েছেন যেন ২০২৭ সালের চুক্তির মেয়াদের তোয়াক্কা না করে দ্রুত নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ম্যাককালামের দোদুল্যমানতা

অ্যাডিলেডে ৮২ রানের হারের পর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম স্বীকার করেছেন যে প্রস্তুতিতে কিছু ঘাটতি ছিল। তবে পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। তিনি জানান, এই দায়িত্বটি তিনি উপভোগ করেন এবং খেলোয়াড়দের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনাই তাঁর লক্ষ্য। ২০২৬ সালের ইংলিশ সামারে তিনি দায়িত্বে থাকবেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি উত্তর দিয়েছেন, “এটি আমার ওপর নির্ভর করছে না, অন্য কারো সিদ্ধান্তের বিষয়।”

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিংও ইংল্যান্ডের সমালোচনা করে বলেছেন যে, শতকের সেরা দল নিয়ে আসার দাবি করলেও ইংল্যান্ড আদতে লড়াই করার মতো ক্রিকেট খেলতে পারেনি। এখন দেখার বিষয়, মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্টে ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াতে পারে নাকি ‘বাজবল’ দর্শনের চূড়ান্ত সলিল সমাধি ঘটে।