ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত কার্বি-আংলং জেলায় চলমান সংঘর্ষে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের তীব্রতায় রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
চলতি মাসের গোড়ার দিক থেকে উপজাতি ও অ-উপজাতি দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিক্ষোভকারীরা স্বায়ত্তশাসিত কার্বি আংলং পরিষদের প্রধান ব্যবস্থাপক ও বিজেপি নেতা তুলিরাম রংহাঙ্গের পৈতৃক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। এই ঘটনায় উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) পরিস্থিতি আরও তীব্র আকার ধারণ করে। খেরোনি বাজারে অগ্নিকাণ্ডে বহু ঘরবাড়ি এবং দোকানপাট পুড়ে যায়। পাশাপাশি বহু গাড়ি ও মোটরসাইকেলও ধ্বংস হয়। কারফিউ জারির পরও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে।
সংঘর্ষের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উপজাতি সম্প্রদায়ের অভিযোগ, হিন্দি, বাংলা ও নেপালি ভাষাভাষী “বহিরাগতরা” এলাকায় দখলজাঁত করছে এবং তাদের উৎখাত করতে হবে। এই দাবিতে ৬ ডিসেম্বর থেকে অনশন-আন্দোলন শুরু হয়। সোমবার পুলিশ অনশনকারীদের নেতা তুলিকে চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে নিয়ে যায়। এ সময় ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা সহিংসতা ছড়ানোর প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত।
আসাম পুলিশের মহাপরিচালক হরমিত সিং সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, “চিকিৎসার প্রয়োজনের কারণে নেতাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এর পরে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিক্ষোভকারীরা একটি সেতু দখল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দিলে তাদের দিকে বোমা ও তীর ছুঁড়ে হামলা করা হয়।”
নিম্নলিখিত টেবিলে সাম্প্রতিক সহিংসতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
| তারিখ | ঘটনা | ক্ষয়ক্ষতি | নিহত | অগ্নিকাণ্ড স্থান | পুলিশী পদক্ষেপ |
|---|---|---|---|---|---|
| ২২ ডিসেম্বর | তুলিরামের বাড়ি আগুন | বাড়ি ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত | ০ | তুলিরাম রংহাঙ্গের বাড়ি | পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা |
| ২৩ ডিসেম্বর | খেরোনি বাজারে সংঘর্ষ | বহু ঘরবাড়ি, গাড়ি, মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে | ২ | খেরোনি বাজার | রাত্রীকালীন কারফিউ, পুলিশি মোতায়েন |
| ৬ ডিসেম্বর থেকে | অনশন-আন্দোলন | – | – | বিভিন্ন উপজাতি এলাকা | – |
কার্বি-আংলংয়ের স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি এখনও সংবেদনশীল এবং প্রশাসন সতর্ক নজরদারিতে আছে।
