আর্থিক সুশাসন জোরদারে নতুন নিয়োগে বীমা নিয়ন্ত্রক

বাংলাদেশের বীমা খাতকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ নিয়েছে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারের লক্ষ্যে সংস্থাটি পূর্ণকালীন ভিত্তিতে একজন সিনিয়র অ্যাকাউন্টিং কনসালটেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই নিয়োগের মেয়াদ দুই বছর নির্ধারণ করা হলেও, কর্মদক্ষতা ও সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী চুক্তি নবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ আইডিআরএর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

আইডিআরএর জারি করা অফিসিয়াল সার্কুলার অনুযায়ী, যোগ্য ও অভিজ্ঞ বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভেতরে এই পদটিকে অত্যন্ত কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলো, যখন রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভ্যন্তরীণ আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহি প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র অ্যাকাউন্টিং কনসালটেন্ট আইডিআরএর আর্থিক স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা রক্ষায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবেন। তিনি কার্যত সংস্থার অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। তার প্রধান দায়িত্বের মধ্যে থাকবে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত, হিসাব সংরক্ষণ ও হালনাগাদ রাখা এবং নিয়মিত ব্যাংক রিকনসিলিয়েশন সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি বহিরাগত নিরীক্ষক কিংবা বিভিন্ন তদারকি সংস্থার উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি এবং সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা ও আর্থিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংশোধনী বাস্তবায়নও তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রযুক্তিগত হিসাবরক্ষণ কাজের পাশাপাশি এই কনসালটেন্ট আইডিআরএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অডিট পর্যবেক্ষণ এবং হিসাব সংক্রান্ত নীতিমালা বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেবেন। এর ফলে সংস্থার ভেতরে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বাড়বে এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক সংস্কৃতি আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইডিআরএ আরও জানিয়েছে, এই পদটি কেবল নিয়মিত আর্থিক তদারকির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। কনসালটেন্টকে হিসাব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল অ্যাকাউন্টিং কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেওয়াও তার অন্যতম দায়িত্ব হবে। এর ফলে আইডিআরএ ধীরে ধীরে ম্যানুয়াল বা আংশিক ডিজিটাল ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বয়ংক্রিয়, দক্ষ ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় রূপান্তরিত হবে।

যোগ্যতার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বা সমমান বিষয়ে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি সম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪০ বছর এবং হিসাব, নিরীক্ষা বা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অন্তত ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সরকারি বা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হবে।

পারিশ্রমিক নির্ধারিত হবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী। আইডিআরএ জানিয়েছে, শুধুমাত্র বাছাইকৃত প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারে ডাকা হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নিয়োগ উদ্যোগ আইডিআরএর অভ্যন্তরীণ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আধুনিক হিসাব কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। এর ফলে দেশের বীমা খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা ও জনআস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।