আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে

আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে। দেশের সবচেয়ে আলো‌চিত কয়লা ভি‌ত্তিক ১৩২০‌ মেগাওয়ার্ট এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ প্রকল্প আবারো রেকর্ড প‌রিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। গত ৮জুন রাতে কয়লার সংকটের কারণে এ উৎপাদন বন্ধ হয়ে‌ছিল এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের উপ প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল) প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। তখন এ প্রকল্প থেকে ৪দিন গড়ে ৩০০-৩৫০ মেগাওয়ার্টের উপরে জাতীয় গ্রিড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল। এ‌দিকে আবারো সোমবার রাত থেকে বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট সফলভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। 

আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে

প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) পূর্ণ সক্ষমতায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা পাওয়ার প্ল্যান্টটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের মোট দুটি ইউনিট রয়েছে। যেটির প্রথম ইউনিট থেকে গত ২৪ মে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছিল ২৮ জুন। এবার পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেল দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজির মালিকানাধীন এসএস পাওয়ারের একটি ইউনিট।

আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে

এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইবাদত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশের মানুষের জন্য খুবই খুশির দিন। পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় আমরা ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সফলভাবে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পেরেছি এবং সে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এ পাওয়ার প্ল্যান্টটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাঁশখালীর এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশি-বিদেশি অর্থায়নে দেশের প্রথম বৃহৎ বেসরকারি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। ২.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থাৎ ২৮ হাজার কোটিরও বেশি ব্যয়ে নির্মিত এ পাওয়ার প্ল্যান্টটি বেসরকারি একক বিনিয়োগ হিসেবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এছাড়া বেসরকারি প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগেও রেকর্ড করেছে এস আলম গ্রুপ। প্রকল্পটিতে শীর্ষস্থানীয় দেশীয় কোম্পানি এস আলমের অংশীদারিত্বের পরিমাণ ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর ফলে শিল্প কারখানার প্রসার, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নতি ও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়ও নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এটি পুরোপুরি উৎপাদনে থাকলে দৈনিক প্রায় ২.৯৩ কোটি ইউনিট ও মাসে প্রায় ৮৮ কোটি ইউনিটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।

 

আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে

 

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর ২০১৬ সালে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এরপর কার্যক্রম শুরুর পর অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় খুব দ্রুতই সফলভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে এসেছে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। বাঁশখালীর সাগর উপকূলীয় গন্ডামারা এলাকায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অব‌স্থিত এ প্রকল্প‌টি নানা কারণে বিগত দিনে সবার নজর কেড়েছে। এ প্রকল্পের পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগরের জেগে উঠা চরে অর্থ‌নৈ‌তিক অঞ্চল করার প্রক্রিয়া চলমান। সে অর্থ‌নৈ‌তিক অঞ্চল প‌রিদর্শন করেন  সরকারের বি‌ভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সহ সৌ‌দি আরবের রাষ্ট্রদূত সহ দা‌য়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সে সব বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা হবে স্ব‌নির্ভর দেশ গড়ার অন্যতম অর্থনৈ‌তিক অঞ্চল, সে আশাবাদ স্থানীয়দের।

Leave a Comment