অগ্নিকাণ্ডের পর কেরানীগঞ্জের জাবালে নুর টাওয়ার ছাড়ছেন বাসিন্দারা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত জাবালে নুর টাওয়ার নামের বহুতল ভবনের ভূগর্ভস্থ গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ভবনটির বাসিন্দারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কারণে অনেকেই ধাপে ধাপে নিজেদের প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। সোমবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভবনের বিভিন্ন তলার বাসিন্দারা পিকআপভ্যান ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরিয়ে নিতে শুরু করেন।

গত শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে ভবনটির ভূগর্ভস্থ গুদামে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। সৌভাগ্যক্রমে এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে ভবনে বসবাসরত ৪৫ জন বাসিন্দাকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাবালে নুর টাওয়ারটি প্রায় ৪২ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত সাতটি পৃথক ভবনের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলোর বেজমেন্ট একটিই। ভবনটির ভূগর্ভস্থ অংশ, নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ঝুট কাপড়ের গুদাম ও দোকান। তৃতীয় থেকে দশম তলা পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২৫০টি আবাসিক ফ্ল্যাট, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের প্রবেশপথে সারি সারি পিকআপভ্যান ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বাসিন্দারা ঘরের আসবাবপত্র নামিয়ে নিচে এনে গাড়িতে তুলছেন। তৃতীয় তলার বাসিন্দা জামিল মিয়া বলেন,
“আগুন লাগার রাতে পরিবার নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশের আগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে আজ মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছি।”

চতুর্থ তলার বাসিন্দা আবু তাহের জানান,
“আগুন নেভার পরও আতঙ্ক কাটেনি। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। কবে আবার ঘরে ফেরা যাবে—কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার পর ভবনটির মালিক মোহাম্মদ ফারুক মিয়া (দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি) ও আবাসন ব্যবসায়ী নুরে আলম আত্মগোপনে চলে গেছেন। ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফতাব আহমেদ বলেন,
“তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আপাতত বাসিন্দাদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এক এক করে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

জাবালে নুর টাওয়ার: সংক্ষিপ্ত তথ্য

বিষয়তথ্য
ভবনের নামজাবালে নুর টাওয়ার
অবস্থানদক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
অগ্নিকাণ্ডের সময়শনিবার ভোর ৪টা
আগুন নিয়ন্ত্রণে সময়প্রায় ১২ ঘণ্টা
ফায়ার সার্ভিস ইউনিট২০টি
আবাসিক ফ্ল্যাটপ্রায় ২৫০টি
আনুমানিক বাসিন্দাপ্রায় ৫,০০০ জন
ভবন মালিকমোহাম্মদ ফারুক মিয়া, নুরে আলম
বর্তমান অবস্থাতদন্তাধীন, বাসিন্দারা মালামাল সরাচ্ছেন